সৈয়দ হোসেন, নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার আঠারবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ২০০৯ সাল থেকে দীর্ঘ দেড়যুগের ও বেশি সময় ধরে গরু-ছাগলের হাট বসছে। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ঐ বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। সেই সাথে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক পাঠদান কার্যক্রম। ইজারাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় বারবার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছে না স্থানীয়রা।
জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট হওয়ার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গরু বোঝাই ট্রাক,পিকআপ,ভটভটিসহ নানান রকমের দেশীয় গাড়ি দিয়ে হাটের দিন রাস্তার উপর গাড়ি রাখার ফলে বুধবার সকাল থেকে রাত অবধি নিকলী টু বাজিতপুর,নিকলী টু ভৈরব, নিকলী টু কটিয়াদী সড়ক অবরুদ্ধ থাকে। এতে করে জনদূর্ভোগ পোহাচ্ছে রোগী, নারী,শিশু ও পর্যটকসহ সর্বসাধারণ। এছাড়া উপজেলা সদর, কিশোরগঞ্জ জেলা সদর ও নিকটস্থ উন্নত চিকিৎসার জন্য জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে রোগী পরিবহনসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে হাটের দিনটিতে।
বিদ্যালয়টির পাশে গরুর হাটের মধ্যবর্তীস্থানে রয়েছে জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স আর এটিতে রয়েছে পশু চিকিৎসা কেন্দ্রসহ সরকারি বিভিন্ন অফিসের সাপ্তাহিক কার্যক্রম ও ইউনিয়ন পরিষদের সেবামূলক কার্যক্রসমূহ সপ্তাহের এদিনটিতে নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন এলাকার আবদুল রহিম এবং আলী জমশেদ নামে একাধিকব্যাক্তি এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি সদস্য।
আঠারবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, হাটের দিন গরু আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ভটভটি, ট্রলি, রাস্তাজুড়ে দখলে থাকে। ফলে বেশিরভাগ সময় যাতায়াত তো দূরের কথা, গরুর বর্জ্যে শরীর এবং পড়নের স্কুল পোষাক নোংরা হয়ে যায়। তারা আরও জানায়, হাটের দিনটিতে বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করতে পারি না। অনেক সময় বিদ্যালয়ের মাঠে পড়ে থাকা গোবরে পা পিছলে পড়ে গিয়ে পড়নের স্কুল পোষাক নোংরা হয়ে যায়। গরু-ছাগলের বর্জ্যে হাটসহ রাস্তা-ঘাট এবং স্কুলমাঠ এবং আশেপাশের এলাকা দূর্গন্ধময় ও নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কোন প্রকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকায় এসব নোংরা ও দুর্গন্ধ সইতে হয় শিক্ষার্থীদের এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের ।
এলাকাবাসী জানায়, গোপিরায়ের বাজারের নামে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে জায়গা না থাকায় সপ্তাহের বুধবার স্কুল মাঠেই হাটটি বসে। গরুর হাটের দিন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে কৃষক এবং পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে এ বাজারে উপস্থিত হন। দরকাষা কষি এবং হৈ-চৈ শব্দ এবং গরু-ছাগলের ডাক-হাক অনেক দূর পর্যন্ত শোনা যায়।
স্থানীয়রা আরো জানান, বর্ষা মৌসুমে কাদা এবং খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা মাঠ দিয়ে চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়। অবস্থা এমন যে দেখার কেউ নেই এবং কারো মাথা ব্যাথ্যাও নেই।
আঠারো বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আওয়াল বলেন, গরুর হাটের দিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে চরম বিপাকে পড়ে এতে করে ঐদিনটিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে নগন্য।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাকিলা পারভীন এ প্রতিনিধিকে জানান, বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে গরুর হাট বসার কারণে হাট পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে বিদ্যালয় মাঠে গরুর হাট না বসতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
Leave a Reply